“চতুর্মুখী লড়াইয়ের প্রশাসন; পদ ছাড়তে নারাজ অনেকেই”

সংবাদ বিভাগ: বিগত সরকারের বিতর্কিত আমলা এবং জামায়াত চেতনাধারীরা একতাবদ্ধ হয়ে কৌশলে দল-নিরপেক্ষ চৌকস আমলা জাতীয়তাবাদী ধারায় বিশ্বাসী আমলাদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করছে। মুজিববাদী ও জামায়াত চেতনার আমলারা জোটবদ্ধ হওয়ায় এখনো দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেননি অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনে ফ্যাসিবাদরা দায়িত্ব থাকার কারণে এখনো জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি। অবশ্য কয়েকজন উপদেষ্টার অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা, আমলাতন্ত্রের জটিলতা না বুঝে আমলাদের ওপর নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। এনজিও থেকে উঠে আসা উপদেষ্টাদের কারো কোরো এখনো তথাকথিত প্রগতিশীল মানসিকতাও কম দায়ী নয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ আবার বলে আসছেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকর্তাদের বিচার করা হবে। এগুলো মুখে বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা প্রশাসনে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে অর্থমন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছে আসছেন ফ্যাসিবাদরা। তবে বড় বড় মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ ছাড়তে নারাজ। এ জন্য এসব ফ্যাসিবাদী আমলারা পদে থাকতে উপদেষ্টাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ”েষ্টা করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ত্রয়োদশ-জাতীয়-সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি। ইতোমধ্যে প্রশাসন দখলে চলছে চতুর্মুখী লড়াই শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগ লড়াই শুরু করেছে। তবে প্রশাসনে মাঠ ছাড়াতে নারাজ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ আমলারা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে প্রথমে প্রশাসন দখলে নিতে এগিয়ে জামায়াতপন্থীরা। সরকার ও জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ে বিএনপিপন্থী বঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগপন্থীরাও চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। আবার নতুন করে প্রশাসন দখল নিতে পরিকল্পনা শুরু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কয়েকজন উপদেষ্টা তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে পছন্দদের সরকারি কর্মকর্তাকে বদলি ও নিয়োগ দিয়ে বলয় তৈরি করছেন। প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানান উদ্যোগ নিলেও এখনো তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রশাসনে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা বা ভালো পোস্টিং না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিগত সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি অংশ চরম দলবাজি করেছে। অতি উৎসাহী কিছু সরকারি কর্মকর্তা (রাজনৈতিক) দলের নেতাকর্মীদের মতো আচরণ করছেন। এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা দাপটের সাথে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে গত ১৬ বছর ধরে যারা বঞ্চিত তাদের ক্ষোভ ও হতাশা আরো বাড়ছে। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছর বঞ্চিত কর্মকর্তারা এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে শুরু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনো ফ্যাসিবাদী কর্মকর্তাদের দখলে রয়েছে। তবে উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে কিছু ফ্যাসিবাদী কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও তারা আবার ভালো ভালো মন্ত্রণালয়ে বদলি নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। সব মিলে চতুর্মুখী চাপে বিপাকে পড়েছে দল নিরপেক্ষ সরকারি কিছু আমলা। তবে প্রশাসনের বেশির ভাগ আমলা এখনো বিএনপি ও আওয়ামী লাগের বাইরে অন্য রাজনীতিক দলের মধ্যে সমর্থন দিতে রাজি নয় বলে জানা গেছে।

  • Related Posts

    “আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না: আইজিপি”

    সংবাদ বিভাগ: পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আমাদের কাজ করতে দেন। অনুগ্রহ করে আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকাল ১০টায় গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় শিল্পপুলিশ-২ এর…

    “জানাজানি হওয়ায় ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন এসআই”

    সংবাদ বিভাগ: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের জাটিয়া উচ্চ বিদ‍্যালয়ের নৈশপ্রহরী মো. আরমান হোসেন (২৪) হত্যা মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর টাকা ফেরত দিয়েছেন। ছবি: এসআই নজরুল ইসলাম। বুধবার…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *