সংবাদ বিভাগ :রাজশাহী: আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) রাবি ভর্তি পরীক্ষা। রাবির ২৭টি বিভাগের ‘এ’, ‘বি’ এবার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪১৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারই প্রথমবারের মতো রাবির ভর্তি পরীক্ষা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। রাজশাহী ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক কেন্দ্রে ১২, ১৯ ও ২৬ এপ্রিল ভর্তি পরীক্ষার আসন বণ্টন করা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে রাবির শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান।
লিখিত বক্তব্যে রাবি উপাচার্য বলেন, ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক শ্রেণির ভর্তি-পরীক্ষা। এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক শিফটে অনুষ্ঠিত হবে ভর্তি পরীক্ষা। রাজশাহী ছাড়াও পাঁচটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে শনিবার মোট ৪২ হাজার ৪৪৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে রাবি কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করবেন ১৩ হাজার ৬৩১ জন। ১২, ১৯ ও ২৬ এপ্রিল যথাক্রমে ‘বি’, ‘এ’ ও ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা বিবেচনা করে এবার প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে আঞ্চলিক কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এই তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘এ’ ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত আছে। ‘বি’ ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বছর মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩২৩টি। রাবি ছাড়াও ঢাবি, জবি, চবি, খুবি ও রংপুর অঞ্চলে বেরোবিসহ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দ্য মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার আসন বিন্যাসসহ বিস্তারিত সময়সূচি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষার্থীদের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তাদের আসন ও পরীক্ষা কেন্দ্র সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।
উপাচার্য আরও বলেন, তিন ইউনিট মিলে রাবি কেন্দ্রে ৭২ হাজার ৩৫ জন, ঢাবি কেন্দ্রে ৮২ হাজার ৭৪১ জন, জবি কেন্দ্রে ১০ হাজার জন, বেরোবিসহ সন্নিহিত অন্য দুটি ভেন্যুতে ৩৫ হাজার ৬৩০ জন, খুবি কেন্দ্রে ২৩ হাজার ১৮ জন এবং চবি কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৯৯১ জন শনিবার পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে। এবার এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বিষয়ে উপাচার্য বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে কখনও কখনও অসাধুচক্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নিয়ে থাকে। তারা কখনও কখনও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কাগজপত্র জমাও রাখে এবং রেজাল্ট শিটে নাম দেখেই অর্থ দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নিজ যোগ্যতায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও প্রতারণার শিকার হয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এমন প্রতারক চক্রের খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন। এ ধরনের কোনো কিছুর আভাস-ইঙ্গিত পেলে তা যত দ্রুত সম্ভব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের রাবি ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। এখানে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা কারসাজির সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, বিষয় ও হল নির্বাচন, মাইগ্রেশনসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হবে। এতে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নির্ভুল ফল প্রকাশ করা এবং সর্বোপরি জাল-জালিয়াতি ও কারসাজি রোধ করা সম্ভব হবে। ভর্তি হওয়ার সময়ও প্রতিটি বিভাগ পরীক্ষার্থীর কাগজপত্রসহ ছবিগুলো মিলিয়ে দেখবেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত মূল পরিচয়পত্র দেওয়ার সময়ও ওই পরীক্ষার্থীর ছবি আইসিটি সেন্টার মিলিয়ে দেখবেন। যদি এক্ষেত্রে কোনো অসংগতি পরিলক্ষিত হয় তাহলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট http://admission.ru.ac.bd/ থেকে দেখা যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে রাবি উপাচার্য বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১২টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য ৬টি হেল্পডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিভাবকদের বসার জন্য সর্বমোট ১১টি অভিভাবক টেন্ট তৈরি করা হয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ২টি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটসহ ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫০ জন সদস্য কর্মরত থাকবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার গাইড ও স্টুডেন্টস কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ১০০ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে। প্রতিটি একাডেমিক ভবনের প্রবেশ পথে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বিএনসিসি, রোভার স্কাউট সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে টহল ও পরীক্ষার দিনগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হবে। ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ৬০ জন কোয়ান্টাম সদস্যসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য রোভার স্কাউট ও পিডিএফ সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। এস্টেট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে অস্থায়ী খাবারের দোকান, স্থান নির্ধারণ, মূল্য নির্ধারণে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল বক্স স্থাপন করা হয়েছে। পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রক্সিকান্ডের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্টর অফিস কর্তৃক চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছে।
এ সময় পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে উপাচার্য বলেন, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার তিন দিন আগে থেকে অনলাইনে প্রদত্ত দুই পৃষ্ঠার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে A4 মাপের কাগজে রঙিন প্রিন্ট করে নিতে হবে শিক্ষার্থীদের। প্রবেশপত্রের দুই পৃষ্ঠার প্রথম পৃষ্ঠা পরীক্ষার্থীর কপি (Candidate Copy) ও অন্য পৃষ্ঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের কপি (University Copy)। পরীক্ষার সময় এই দুই পৃষ্ঠার প্রবেশপত্র ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। প্রবেশপত্রের গায়ে উল্লিখিত নির্দেশনাবলি আগেই ভালোভাবে লক্ষ্য করে সেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। পরীক্ষার হলে কোনো ধরনের ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ব্লুটুথ ও মেমোরিযুক্ত কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না।
উজ্জল হোসেন।
ব্যুরো প্রধান,রাজশাহী।