সংবাদ বিভাগ: রাজশাহী: নাটোর আদালতের মালখানা থেকে চুরি হওয়া নগদ ৬১ লাখ ৫৯ হাজার ৩০০ টাকা ও ১৪ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ৫৮ ভরি রুপা উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা কোর্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক ও কনস্টেবল মো. আশরাফুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একরামুল হককে প্রধান করে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন ভেতরের খবরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতের কোনো এক সময় আদালতের মালখানার জানালার গ্রিল কেটে চুরি হয়েছে। সেখান থেকে নগদ ৬১ লাখ ৫৯ হাজার ৩০০ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ ও ৫৮ কেজি রুপা চুরি হয়। এ ঘটনার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন, টাকাসহ মালামাল উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চারজনকে আদালতের নির্দেশে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মো. নজরুল ইসলাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিদের হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় বিচারক মো. আল আমিন শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুর রহমান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম ভেতরের খবরকে জানান, গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাত থেকে শনিবার (১২ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত সদর থানা পুলিশ, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পিবিআই ও সিআইডির ছয়টি দল আলাদা অভিযান চালিয়ে এসব টাকা ও সোনা-রুপা উদ্ধার করে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক ওইদিনই দুপুরের দিকে আদালতের পেছনে সার্কিট হাউসের ড্রেন থেকে ২৪ লাখ ৬৫ হাজার নগদ টাকা ও চুরি হওয়া সব স্বর্ণ ও রুপা উদ্ধার করা হয়।
পরে অবশিষ্ট ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা রাতেই অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার কাদিপুর গ্রামের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়। এসময় ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কোর্ট পুলিশ সদস্য (কম্পিউটার অপারেটর) মো. আল আমিন ও তার স্ত্রী সাদিয়া খাতুন, বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য মো. রাশেদুন নবী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মী (সুইপার) মো. আকাশ, মো. বাতাস ও মো. বদু এবং শহরের ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা মো. সাব্বির হোসেন। এদের মধ্যে সাব্বির হোসেন গত শনিবার বিকেলে এবং সাদিয়া খাতুন রোববার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
অপর চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সদর থানায় রিমান্ডে রাখা হয়েছে। তবে একজন আসামির নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা কোর্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শত (এসআই) মো. এনামুল হক ও কনস্টেবল মো. আশরাফুল হককে অবহেলার দায়ে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. একরামুল হককে প্রধান করে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কোর্ট পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালতের মালখানায় প্রায় সাড়ে আট হাজার মামলার আলামত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ মামলার আলামত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতের কোনো এক সময় আদালতের মালখানার জানালার গ্রিল কেটে চুরি হয়ে যায়। যার মধ্যে নগদ ৬১ লাখ ৫৯ হাজার ৩০০ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫৮ কেজি রুপা রয়েছে।
এ টাকার মধ্যে গত ১৩ মার্চ রাত ২টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্টে তল্লাশির সময় একটি প্রাইভেটকার থেকে গাইবান্ধার সেই সময়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিউল ইসলামের কাছ থেকে পুলিশের জব্দ করা ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকাও রয়েছে।