“২০ বছরের পথ চলায় “নোঙর” নদীর পথে চলেছে, নদীর কথা বলেছে”

ভেতরের খবর নিউজ ডেস্ক: বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে গেলে যে কথা না বললেই হবে না সেটি হল নদীর কথা। বাংলাদেশের মানচিত্রের পুরোটা জুড়েই যেন নদীর অস্তিত্ব। নদী বয়ে চলছে নীরবধি । এজন্যই বুঝি বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাত্রিক দেশ। এই দেশের আনাচে কানাচে গ্রামে-গঞ্জে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদী৷ নদীকে বাঙালীরা “মা” বলে সম্বোধন করে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। যত্ন নিয়ে এসেছে মায়ের মতন। এই নদীতে বাস করা নানান রকম মাছ বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী খাবার। বাঙালীদের পরিচয় বলতে গেলে এক শব্দে “মাছে ভাতে বাঙালী”।

যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পথ বয়ে চলা নদী’র কলোগঞ্জন বাঙালী জাতীর ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্যে ধারণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে শীর্ষে। এই দেশে খালবিল নদীনালা নিয়ে কতশত কবির কলামে উঠে এসেছে ছন্দ, কবিতা, গল্প, উপন্যাসের আঙ্গিক লীলা খেলায়। কত সুরে গান রচিত হয়েছে এই নদী নিয়ে;;নদীর উথাল পাতাল ঢেউ, সূর্যের সাথে টিচচিক খেলায় ।

আধুনিকতার এই যুগে যান্ত্রিক শহরের প্রতি মানুষের আকর্ষণ থেকে প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে বাঙালির শতবছরের ঐতিহ্যে বয়ে যাওয়া এই নদী। নদী ভরাট করে অট্টালিকা গড়ে উঠার গল্প অনেক আছে আমাদের শহরে। । কিছু কিছু নদী আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে সবার চোখে আঙুল দিয়ে গন্ধ ছুটালেও কার চোখে পড়ে না। । গত একটা জেনারেশন নদী পরিবেশ ভুলে গিয়ে যান্ত্রিক শহরে ইট-পাথরের মায়ায় ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। সেখানে দীর্ঘ বিশ বছর যাবৎ নদী বাঁচিয়ে রাখার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একটি সংগঠন। যার নাম “নোঙর”।

বাড়ির উঠোন ঘেসে বয়ে যাওয়া নদীর প্রেমে পরেছিলো সুমন শামস নামক এক নদী যোদ্ধা, নদীর প্রতি দুর্বলতার অনেক আগে থেকেই, মাঝখানে ঘটে যায় এক নির্মম কাহিনী, সুমন শামস নামের এই নদীর যোদ্ধা নদীপথের এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন তাঁর মাকে, সেই থেকে চোখের জল আর নদীর জল যেন মিশে গেল।। সেই থেকে ২৩ মে কে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা দাবিতে, নদী পরিবেশ প্রকৃতি সুরক্ষায় মাঠে নেমে পড়লেন। শুরু হল নৌনিরাপত্তা, নদী পরিবেশ বাঁচানোর সংগ্রাম। উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য শহরে এসে নদী মরে যেতে দেখে, হতভাগ হয় সদস্য সচিব রাশিদুল হাসান সুজন। যোগদেন নদীপ্রেমী সংগঠন নোঙরের সদস্য হোন এবং রাজশাহী অঞ্চলের নদী নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব পান। দৃঢ় সংকল্প এবং স্বপ্ন একটাই “নদী এবং পরিবেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর সবুজ একটা বাংলাদেশ গড়া”।

নোঙরের পথচলা উপলক্ষে এবার নোঙর ভিন্নধর্মী একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলার চিত্রশালা অডিটোরিয়ামের আর্ট গ্যালারিতে। ৭০০ আর্টিস্ট নিয়ে নদী, প্রাণ, পরিবেশ, আর্ট কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর তৃতীয় তলায় চিত্রশালা সাতে। আর্ট এক্সিবিশনকে ঘিরে গত জানুয়ারীতেই রাজধানীর কোলে অবস্থিত বুড়িগঙ্গা নদীতে সরাসরি “আর্ট করা” কর্মসূচি পালন করে।

এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ঘরনার আর্টিস্টদের আর্ট এক সাথে সমবেত এই আয়োজন করা হয়৷। এখানে শিশু-কিশোর, ছাত্র-শিক্ষক থেকে নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চিত্রকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নোঙরের বিশ বছর উপলক্ষে আয়োজিত আর্ট এক্সিবিশনের নাম দেওয়া হয়েছে “জীবন নদী”।

নোঙরের চেয়ারম্যান সুমন শামসের কথা বলে জেনেছি,৭০০ আর্টিস্টদের নিয়ে আয়োজিত এই আর্ট এক্সিবিশনে সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী বিশেষ আর্টিস্টদের।

জীবন নদী শিরোনামে আয়োজিত এই আর্ট এক্সিবিশনের উদ্ভোদন করেন পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রেজওয়ানা চৌধুরী। আগামী ২৯ মে পর্যন্ত প্রতিদিন এই কর্মশালা চলবে।

নদীমাত্রিক বাংলাদেশের মানচিত্রে নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে জনগণকে নদীর প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে৷ নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে দেশের সকল মন্ত্রণালয় সহ সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নদী উন্নয়নে এগিয়ে থাকতে। নদী ঘিরেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নদী নিয়েই বয়ে যায় বিশ্বমানচিত্রে। নদী বাঁচাতে বিশবছর ধরে কাজ করা নোঙরের পরিবারের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। নদী বাঁচুক! নদীর সাথে নোঙরের স্বপ্নও পূরণ হোক৷

  • Related Posts

    “আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত বৃদ্ধের মৃত্যু”

    ভেতরের খবর নিউজ ডেস্ক: (রাজশাহী): নাটোরের বড়াইগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।…

    “তারেক রহমান যে উপহার দিলেন ডঃ ইউনুসকে”

    ভেতরের খবর নিউজ ডেস্ক: (রাজশাহী): অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল আলোচিত বৈঠকটি সম্পন্ন হয়েছে। বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূসকে দুটি বই ও একটি…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *