“আমার ধারণা, বাঙালি শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে ব্যাঙ থেকে” এ অঞ্চলে প্রচুর জলা ও নিম্নভূমি ছিলো, যেগুলোতে বাস করতো কোটি কোটি ব্যাঙ। ব্যাঙ থেকে ব্যাঙোল, ব্যাঙোল থেকে বাঙালি।

ব্যাঙের সাথে আমাদের চারিত্রিক মিল বিস্ময়কর। ব্যাঙ লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, আমরাও লাফিয়ে লাফিয়ে চলি। টিভি খুললেই শুনতে পাই— লাফিয়ে লাফিয়ে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। লাফ ছাড়াও যে ধীরে ধীরে আগানো যায় অনেক পথ, তা মানতে আমরা রাজি নই।

ব্যাঙের আঁধার পছন্দ, আমাদেরও আঁধার পছন্দ। আলো আমাদের শত্রু। যা থেকেই আলো বেরোয়, তা আমরা দেখামাত্র ধ্বংস করি। একবার তো সূর্যকেও ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নাগাল পাইনি বলে করিনি। তবে আকাশের সূর্যকে টিকিয়ে রাখলেও, মাটির বহু সূর্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি।

ব্যাঙের প্রিয় খাদ্য পোকামাকড়। আমাদেরও প্রিয় খাদ্য পোকামাকড়। মানুষের মধ্যে যারা ক্ষুদ্র ও ক্ষমতাহীন, তাদেরকে পোকামাকড় ভেবে খেয়ে ফেলি। আমাদের জেলখানা ভরে আছে অজস্র পোকামাকড়ে।

ব্যাঙ তার ডোবাকে বিশ্ব জ্ঞান করে। আমরাও তাই করি। রাত-দিন ডোবা নিয়ে পড়ে থাকি। ডোবার বাইরেও যে জগৎ আছে, ওই জগতে যে রূপান্তর ঘটে যাচ্ছে, তা স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত নই।

আমাদের সকল হাঁটা ব্যাঙের হাঁটা। হেঁটে আমরা কোনো দূরত্ব অতিক্রম করি না। হাজার মাইল হেঁটেও আমাদের অতিক্রান্ত দূরত্ব হয় শূন্যের সমান।

ব্যাঙের মতো আমাদের চোখও মাথার উপরিভাগে। সারাক্ষণ আসমানের দিকে তাকিয়ে চলি। কোনোকিছুই গভীরভাবে তলিয়ে দেখি না। ভাসা ভাসা গরিব দৃষ্টি নিয়ে মেঘের ভিড়ে খুঁজি ঈদের চাঁদ।

ব্যাঙ পানি পান করে না। শরীরের চামড়া দিয়ে সে জল শোষণ করে। আমরাও তাই করি। এক অঙ্গের কাজ আরেক অঙ্গ দিয়ে করি। সরল কাজ সরলভাবে করা আমাদের পছন্দ নয়।

ব্যাঙ সমুদ্রে বাঁচতে পারে না। আমরাও পারি না। কোনো বড়ো এলাকায়ই আমরা টিকে থাকতে পারি না। এই ভয়ে বড়ো কোনো স্বপ্নও দেখি না। আমাদের সকল স্বপ্ন আমাদের ডোবার সমান। বাঙালি সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কোনো নতুন দ্বীপ আবিষ্কার করেছে, এরকমটি শোনা যায় না।

ব্যাঙের মতো আমরা পোনাও বেশি ছাড়ি। এ পোনা পৃথিবীর খুব একটা কাজে আসে না। অকাজের জিনিস সংখ্যায় বেশি হয়, এটিই নিয়ম। ব্যাঙের এ নিয়ম আমরা মেনে চলি।

ব্যাঙ যেখানেই বাস করে, সেখানেই কাদা তৈরি করে। আমরাও তাই করি। আমাদের জাতীয় ক্রীড়াকর্মের নাম— কাদা ছোড়াছুড়ি। কারও গায়ে ছুড়ে মারার মতো কাদা না পেলে, পেট থেকে কাদা বের করে ছুড়ে মারি।”

—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
পৃষ্ঠা ২০-২১, বই: আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র
সংজ্ঞাবলীর পদাবলী / বাঙালি

  • Related Posts

    “ইইজি স্ক্যান চলাকালীন মারা যান পেশেন্ট।”

    পেশেন্টের বয়স ৮৭ বছর। মৃগী রোগে আক্রান্ত। চলছিল ইলেকট্রো-এন-সেফালোগ্রাফি বা ইইজি। স্ক্যান চলা অবস্থায়ই হার্ট-অ্যাটাক করেন পেশেন্ট। মৃত্যু হয় তার। ৯০০ সেকেন্ড ইইজি স্ক্যানিং চলে। তবে মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য আচরণ দেখা…

    “সৈয়দ জামিলের অনেক কথা সত্য নয়” – ফারুকী

    সংবাদ বিভাগ: (১ মার্চ ২০২৫ ইং) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে আকস্মিক পদত্যাগ করা সৈয়দ জামিল আহমেদ ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কোলাজ: ইউএনবি ফারুকী বলেন, ‘শুধু…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *