প্রথম আলো কার্যালয়ে’র সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অনভিপ্রেত। দেশের সচেতন জনগণ কখনোই চায় না একটি প্রতিষ্ঠান, জনপ্রিয় কোন গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করা হোক, দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ ভুল ত্রুটি’র পাশাপাশি দেশের মিরর হিসেবে ব্যাপক অবদানও রেখে চলেছে, অতীত, বর্তমানে। তাঁদের তথ্যবহুল সংবাদ অবশ্যই দেশ গঠনে সহায়ক হয়েছে নিত্যদিন, ঘুচিয়েছ, সামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদ। সাথে সাথে…

আমরা লক্ষ্য করেছি ‘প্রথম আলো’র জন্মলগ্ন থেকে এবং বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ আজ্ঞাবহ ও ভারতীয় সুরে সুর মিলিয়ে বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে নিজেদের কে বারংবার প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের নীতিগত অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে নিয়েছেন হাতে নিয়েছেন নানাবিধ পরিকল্পনা, হাসিবাদ সরকারের ব্যর্থতাকে ঢেকে একপাক্ষিক উন্নয়ন ও সাফল্যকে সামনে টেনে প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সংবাদ যা স্বৈরাচারের সচ্ছল দোসর হিসেবেই পরিচায়ক।
বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ আওয়ামী বিরোধী ও ভিন্নমতের নেতাকর্মী’র বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যে প্রোণোদিত ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে টাট্কা গরম নিউজ।

উল্লেখ্য যে, গত ২৪/১১/২০২৪ ইং তারিখে দুপুর থেকে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘প্রথম আলো’র কার্যালয়ে’র সামনে ‘বাংলাদেশের জনগণ’ নামে’র ব্যানারে সংগঠিত আন্দোলনকারীদের ‘কালো গরু জবাই কর্মসূচি’কে স্বাগত জানাতে পারছি না। দেশের অভ্যুত্থাণ পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা না করে একটা জনপ্রিয় পত্রিকা অফিসের সামনে ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে’ সোচ্চার হয়ে, ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকা দু’টিকে তওবা করানো জন্য যে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় সেটা কিভাবে স্পষ্ট হবে? আমরা এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গের পরিচয় এবং তাদের নীতি ও আদর্শের বিস্তারিত খতিয়ান যদি ফাইন্ড আউট না করতে পারি তাহলে এর মূল অজানাই থেকে যাবে। পরবর্তীতে ভিন্ন রুপ ধারণ করে দেশের অন্যতম ক্ষতির কারণ হতে পারে ধারণা করছে নেটিজেন’রা। এদের চিহ্নিত করে আসল উদ্দেশ্যে উদঘাটন করতেন না পারলে সরকার ও গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, এদের নিখাঁদ সঠিক তথ্য বের করে বিশ্লেষণ করা উচিত কারা এরা? এদের আসল উদ্দেশ্য কি?

এই বিক্ষোভের ভেতরে অজানা সত্যে ও মৌলবাদী উত্থানের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। দেশের অভ্যন্তরে বিকৃত মানসিকতা’র কিছু স্বৈরাচারে’র দোসর ও একটি মহল ড.ইউনুস সরকারকে নানান ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্হিতি সৃষ্টি করার জন্য সক্রিয় আছে সারাক্ষণ। নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পলাতক নেতাকর্মীদের বিভান্তিমূলক নানা রকম পোস্ট, সাধারণ মানুষকে ভিন্ন মতাদর্শে একমত করার লক্ষ্যে ভুল তথ্যের ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশন, বিব্রতকর মন্তব্য, উপদেষ্টা মহোদয়দের নিয়ে অস্বস্তিকর তথ্য, তাঁদের সম্মানের সবটুকু ধুয়ে, মাটিতে মিশিয়ে, সঠিক তথ্য না জেনে মনগড়া কন্টেন্ট তৈরী করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যপক প্রচার, প্রচারণা। অনলাইন এবং অফলাইনে তাদের স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অযৌক্তিক কার্যক্রম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়চারা দেশে ব্যাপকভাবে চলমান। তাদের নতুন নতুন সূক্ষ্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রশ্নবিদ্ধ ক্লু তৈরি করা ও অবৈধ টাকার ঝালে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা, ষড়যন্ত্র অব্যহত।
কেননা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ‘ কালো গরু জবাই করে, মাংস রান্না ও বিতরণ কর্মসূচি’ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। দেশবিরোধী কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে যে দুই পত্রিকাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তা একটি আলোচিত সত্য ইস্যু, প্রশ্ন হল ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার’ কতটুকু দেশবিরোধী সংবাদ প্রকাশে’র অংশীদার। প্রথম আলোকে বলা হচ্ছে মুসলমান বিরোধী এবং জঙ্গি তৈরির মূল পৃষ্ঠপোষক।

কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কর্মসূচির মূল অংশ ‘কালো গরু জবাই করে রান্না করা এবং সেখানেই জনগণের মধ্যে বিতরণ’ এটি একটি নতুন সূক্ষ্ম পরিকল্পনা’র অংশ হতে পারে, কেননা সেদিনই শাহবাগ চত্বরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মতৈক্যের কারণে বিক্ষোভ এবং একত্রিত হবার চেষ্টা করেন কারণ, হসপিটালে রোগী মারা নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তিন কলেজের সংঘর্ষ, লক্ষ টাকার ঋণের লোভ দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরিব ও নিম্ন জীবি, হতদরিদ্র মূর্খদের ঢাকায় জনসভার নামে জমায়েত হবার চেষ্টা আমাদের মাথায় রাখতে হবে একটি গোষ্ঠী সময় বুঝে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে, সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে’র জন্য চেষ্টা চালিয়েছে এই উপমহাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গৃহযুদ্ধ দেখেছে মানুষ। রাজনীতির ঘোলা মাঠে সাম্প্রদায়িক’র বীজ বপনে’র ফল কি নির্মম! কি নৃশংস হয়!! বরংবার রাজনৈতিক তাপমাত্রা’র গতিতে, সুবিধায়, দোলাচলে ভেঁসে গেছে অসংখ্য মানুষ রক্তে’হিংসার সাগরে।

সবার আগে আমাদের দেখতে হবে এই আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিবর্গের অতীত, বর্তমানের ফিরিস্তি।এদের প্রথম সারির মুখগুলোকে এবং নেতৃত্ব দানকারীদে’র মার্ক করে তাদের আসল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয় খুঁজে বের করা অতীব জরুরী , স্বীয় উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এই আন্দোলনের ডাক নাকি ভিন্ন ইঙ্গিত? ভিন্নকিছু?
হাসিবাদের পর মৌলবাদীর উত্থান কোনভাবেই এ জাতির কাম্য নয়। ড. ইউনুস সরকার’সহ ছাত্র জনতা ও সর্ব-মহলের জনগণকে সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করার জন্য ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সবিনয় আহ্বান জানাচ্ছি! বিশিষ্ট লেখক ও কবি হুমায়ুন আজাদ স্যার লিখেছিলেন, “বাঙালী আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনো কখনো সফল হয়, সফল হওয়ার পর বাঙালির মনে থাকে না কেন তারা আন্দোলন করেছিল”। কোন ষড়যন্ত্রই এ সরকারকে রুখতে পারবে না জেনেও আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে আবারও শপথ নিয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বীয় দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে, দরজায় কড়া নাড়ছে, এখনই সচেতন না হলে, ভুক্তভোগী হবো আমরাই এবং চরম নৃশংসে।

দেশের এই টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কারমুখী কার্যক্রম, নির্বাচনের নতুন হাওয়া, গণঅভ্যুত্থাণ পরবর্তী ধ্বংসযজ্ঞের পর, রাষ্ট্রযন্ত্রের পুরো সিস্টেম যখন ভেঙে আবার গড়ার চেষ্টা ঠিক সেই সময় ‘একটা শীর্ষস্থানীয় ও আলোচিত পত্রিকা অফিসের সামনে এমন কর্মসূচি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া প্রশ্নবিদ্ধ করে গোটা জাতিকে।।

তাদের কর্মসূচি’র প্রাথমিক আংশ হিসাবে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে রেখে সরকারকে ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’কে ইতিবাচক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে আল্টিমেটাম পেশ করলে সবার কাছে আন্দোলনটি’র যৌক্তিকতা ও নিরব কর্মসূচি গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেত এবং সমসাময়িক নতুন আন্দোলনের কুল সিষ্টেম কে স্টাবলিস্ট করতো, এবং এক শ্রেণীর সচেতন মহল সেখানে যোগ দিতে কারণ এই বিষয়ে মোটামুটি সবাই অবগত ‘প্রথম আলো’, ‘ডেইলি স্টার’ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশন করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।

সরকার সস্কারপন্থী ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, সরকার যদি লিখিত দাবি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না করতে পারতেন তখন যেকোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অবশ্যই ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হত। প্রথমেই এরকম একটা উদ্ভট পরিকল্পনা দিয়ে আন্দোলন শুরু করাটা কতটুকু সংযমের পরিচয়ক তা দেশের সুশীল সমাজ বিবেচনা করবেন। সাথে সাথে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ সংস্কারের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও জনগণের সংযোগ মাধ্যম গণমাধ্যম গুলো’র দিকে দৃষ্টি ফেরানো সময়ের দাবি। মুখোশধারী কিছু দালাল সাংবাদিক এখনো বিভিন্ন গণমাধ্যমে, প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে আছেন, যা দেশের মুক্তিকামী সচেতন, সাধারণ, জনগণ কারোই কাম্য নয়। অতিসত্তর তাদের খুঁজে বের করে বিগত দিনের কর্মফলের জন্য আইনি ব্যবস্থা ও শাস্তি’র আওতায় না আনা হলে আবারও তাদের হিংস্র আঁচড়ে রক্তাক্ত হতে পারে আমাদের সোনার বাংলাদেশ।

-রাশিদুল হাসান সুজন