সংবাদ বিভাগ:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে জুলাই ও আগস্টের গণহত্যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড, অডিও, ভিডিওসহ ডিজিটাল তথ্য উপাত্ত হাতে পেয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাচাই করতে সিআইডিকে অনুমতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ গোলাম মোর্তজা মজুমদার ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দেন।
এদিকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে রংপুরে নিহত শহিদ আবু সাঈদের পরিবার ২৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
কল রেকর্ড সর্ম্পকে ট্রাইব্যুনালের দুইজন প্রসিকিউটর আইনজীবী তানভীর হাসান জোহা এবং বিএম সুলতান মাহমুদ জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই সময় শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী, আমলা, অফিসারদের টেলিফোনে যে কথা হয়েছিল তার কল রেকর্ড উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তারা দাবি করেন, যাঁদের কল রেকর্ড উদ্ধার করা সম্ভব রয়েছে তাদের অনেকেই গুম, অপহণের মতো মানবতা বিরোধী অভিযোগে যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধেও ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে।
তারা বলেন, ফোন কল বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তার নির্দেশেই পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ সংক্রান্ত কল রেকর্ড, ইলেকট্রনিক নানা তথ্যপ্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে, যা যাচাই-বাছাই করতে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়। পরে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) সহযোগিতার অনুমতি দেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর টিমের পক্ষ থেকে কয়েকটি শুনানির আবেদন করা হয়। তার মধ্যে দুটো গুরুত্বপূর্ণ পিটিশন ছিল। দুজনকে গ্রেফতারী পরোয়ানা চেয়েছি। এটি কোর্ট অনুমোদন করেছেন। আরেকটি হলো, ডিজিটাল তথ্য উপাত্ত এ মামলার অন্যতম পার্ট। ডিজিটাল তথ্য উপাত্ত কোর্টে উপস্থাপন করার আগে সার্টিফিকেশন প্রয়োজন। বাংলাদেশের সার্টিফিকেশন অথরিটি হলো সিআইডি। সিআইডি ডিজিটাল এভিডেন্সগুলো সার্টিফাই করেন যে, এ এভিডেন্সগুলো সঠিক কিনা, নাকি এআই দিয়ে বানানো। এ বিষয়গুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন যোগ্য হয় না। এটি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক আইনে পরীক্ষার এ বিধান আছে। সেক্ষেত্রে অনেক ডিজিটাল এভিডেন্স আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়েছি। কোন ব্যক্তি বিশেষ নয়, সকল ডিজিটাল ভয়েস ও ভিডিও যাচাই করার সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষার বিষয়ে আদালতের অনুমতি নেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের সহযোগিতা ও অসহযোগিতার বিষয়ে আমরা আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দিচ্ছি না। এটি চলমান প্রক্রিয়া। তথ্য সংগ্রহ চলছে। এখনো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো তথ্য সংগ্রহের পর্যায়ে চলছে। কিছু তথ্য পাচ্ছি কিছু পাচ্ছি না। অনেক সময় তথ্য পেতে সময় লাগতে পারে। তবে সরকারের সহযোগিতা চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, কোন এক ব্যক্তির নয়। সকল ডিজিটাল ডকুমেন্ট। তার মধ্যে কল রেকর্ড, ভিডিও ও ছবিসহ যাবতীয় ডিজিটাল ডকুমেন্ট রয়েছে। তবে কোন এক ব্যক্তির নয়। এ মামলার প্রধান আসামী শেখ হাসিনা। এজন্য তার নামেই মামলার পিটিশন হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ট্রাইব্যুনাল কেন চাপের মুখে নেই। প্রসিকিউশন কোন চাপে নেই। আর কোন ধরনের চাপ আসলেও কোন চাপের কাছে এ কমিশন নতি স্বীকার করবে না বলে তিনি জানান। চীফ প্রসিকিউটর আবু সাঈদের পরিবারের অভিযোগ সর্ম্পকে বলেন, আবু সাঈদের পরিবার রংপুরে একটি মামলা করেছেন। আমরা আগেও বলেছি স্থানীয় আদালতে যতই মামলা হোক, যেহেতু এটা ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি তাই এ অভিযোগ যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসে, তাহলে সেটা প্রপার আবেদন হবে। আবু সাঈদের পরিবার নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রাইব্যুনালে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে (সোমবার) তারা সেই ঘটনাগুলোর বর্ণনা দিয়ে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। অভিযোগ দিতে আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান ও তার সঙ্গে ঘটনার সময় যেসব সহযোদ্ধারা ছিলেন তারা এসেছেন। তারা ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার অনেক আসামী এখনও স্বপদে বহাল : আবু সাইদের পরিবারের সদস্যরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার মাত্র ২-৩ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এখনো অনেক আসামী স্বপদে বহাল রয়েছে বলে ক্ষুব্ধ আবু সাইদের পরিবারের সদস্য ও সহযোদ্ধারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শেষে শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদের সহযোদ্ধা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছি। কয়েকদিন আগে আমরা শুনেছি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সব শহীদের হত্যার বিচার সম্পূর্ণ হবে। আমরা এসেছি সেই বিচার কার্যক্রমের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। এতোদিন ধরে আমরা শহীদদের হত্যার বিচার পাইনি। আবু সাইদ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২-৩ জন আসামীকে ধরা হয়েছে। মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে আমরা ট্রাইব্যুনালে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এসে চিফ প্রসিকিউটর স্যারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম বিচারের কার্যক্রম খুব দ্রুত চলতেছে। বিচার কার্যক্রম হবে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত। স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছে শুধু আবু সাঈদের হত্যার না জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সব শহীদের হত্যার বিচার করা হবে ইনশাআল্লাহ। আপনি বলছেন যে আবু সাইদ হত্যা মামলার মাত্র দুই-তিন জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আর এখানে এসে জানতে পারলেন এই হত্যার দ্রুত বিচার করা হবে এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত কিনা প্রশ্ন করা হলে আবু সাঈদের বড় ভাই বলেন, আমরা জানতে পারলাম বিচারের প্রক্রিয়া তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত করা হচ্ছে। আরও জানতে পেরেছি আসামীদের গ্রেপ্তারের কাজ চলমান রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের কাছে কি প্রত্যাশা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাই আবু সাঈদসহ সব শহীদদের হত্যার বিচারে যেন সহযোগিতা করা হয়।
আবু সাঈদের সহযোদ্ধা ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী শামসুর রহমান সুমন বলেন, আবু সাঈদ হত্যাকা- দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ হত্যাকা-ের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। কেন তারা গ্রেপ্তারের আওতায় আসতেছে না এবং আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি তারা স্বপদে বহাল রয়েছেন। সুতরাং সেটি কেন এবং এ বিষয়ে করণীয় কি জানতে এবং আলোচনা করতে আমরা আজ (সোমবার) ট্রাইব্যুনালে এসেছি। আমরা মনে করি এখানে আমাদের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা আশাবাদী আগামীতে আবু সাঈদ হত্যা মামলার সব আসামীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা হবে।
“ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসেছে বিএনপি”
সংবাদ বিভাগ: জাতীয ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছেন।…