“গাবতলী হাটের ইজারা বাতিল, তদন্তে দুদক”

ভেতরের খবর নিউজ ডেক্স: ঢাকার সবচেয়ে বড় গবাদিপশুর হাট গাবতলী হাটের ইজারা প্রসঙ্গে অনিয়ম ও স্বচ্ছতা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সর্বোচ্চ দর দিয়েও একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা না দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নিজেই হাসিল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর এ সিদ্ধান্তের পেছনে ‘অন্য উদ্দেশ্য’ থাকার অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ডিএনসিসি ২০২৫ সালের বাংলা বছরের জন্য গাবতলী পশুর হাটের ইজারা দিতে গত ৩ মার্চ দরপত্র আহ্বান করে। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান আরাত মোটর্স ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করে, যা সরকার নির্ধারিত ১৪.৬১ কোটি টাকার চেয়ে ৭.৬৩ কোটি টাকা বেশি।

অথচ, বিপিপিএ’র (সাবেক সিপিটিইউ) ওয়েবসাইটে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি না থাকাকে অজুহাত দেখিয়ে ১৩ এপ্রিল এ টেন্ডার বাতিল করে দেওয়া হয়।

ইজারা বাতিল: নিয়ম নাকি অজুহাত?
সিটি করপোরেশনের দাবি- সরকারি ক্রয় নীতিমালার আওতায় না পড়লেও সিপিটিইউ ওয়েবসাইটে দরপত্র প্রকাশ না হওয়ায় ইজারা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু, টেন্ডার আহ্বানকারী ও ইজারা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এই কারণটি ‘খোঁড়া অজুহাত’।

বিগত ১২ বছর ধরে হাটের ইজারার ক্ষেত্রে কখনোই ওই ওয়েবসাইটে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা মানা হয়নি, তবু তখন ইজারা বাতিল হয়নি।

সর্বোচ্চ দর, তবুও বাতিল
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সর্বোচ্চ দরদাতা আরাত মোটর্স ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটি ছিল পে-অর্ডারবিহীন, একটি ‘ভুয়া পে-অর্ডার’ জমা দেয় এবং বাকিরা তুলনামূলকভাবে কম দর দেয়।

সেই প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন কমিটি আরাত মোটর্সকে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করে। তা সত্ত্বেও ইজারা বাতিল করে ডিএনসিসি নিজে হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।

দুদকের অভিযান ও অনুসন্ধান
টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখে গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুদক ডিএনসিসিতে অভিযান চালায়। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক জানান, ‘সরকারি রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে নথিপত্র সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।’

দুদক এখন তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবে।

বিপিপিএ: নিয়ম, ব্যাখ্যা ও বাস্তবতা
বিপিপিএ বা সাবেক সিপিটিইউ বলছে, হাট ইজারা ক্রয়সংক্রান্ত নয় বলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশের প্রয়োজন নেই। এই যুক্তি দীর্ঘদিন মানা হলেও এবার প্রশাসন হঠাৎ সেই বিষয়টি সামনে এনে ইজারা বাতিল করেছে।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান মনে করেন, ‘আইনে যা আছে তা লিখিতভাবে পালন না করলে যেকোনো সময় পুরো প্রক্রিয়া বাতিলযোগ্য হয়ে পড়ে।

প্রশাসনের আত্মপক্ষ সমর্থন ও সমালোচনা
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্তে ‘প্রক্রিয়াগত ভুল’ স্বীকার করলেও দায় সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত নিজ হাতে নিয়ে হাসিল আদায়ের কাজ শুরু করেছেন।

তিনি জানান, সময় সংকটের কারণে আপাতত করপোরেশন নিজেই হাট পরিচালনা করছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, পছন্দের ঠিকাদার ইজারা না পাওয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সর্বোচ্চ দর বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে, আগের ইজারাদার ডিপজল (চলচ্চিত্র নির্মাতা মনোয়ার হোসেন) যথাসময়ে হাট বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও, তিনিই ১৩ এপ্রিল রাতে ইজারা হস্তান্তরের চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনা শুধু একটি হাট ইজারার অনিয়ম নয়, বরং সরকারি টেন্ডার ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। সরকারি রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা, নিয়মের অপ্রয়োগ এবং তদন্তে ওঠা ‘অন্য উদ্দেশ্য’- সব মিলিয়ে গাবতলী হাট ইজারা এখন পরিণত হয়েছে প্রশাসনিক জবাবদিহির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাক্ষেত্রে।

  • Related Posts

    “আগামী ছয় মাসের মধ্যে পূর্বাচল বাসযোগ্য হবে- রাজউক চেয়ারম্যান”

    খবর নিউজ ডেস্ক: ০৪/০৫/২০২৫ ইং পূর্বাচলের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন চেয়ারম্যান। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পূর্বাচলকে বাসযোগ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পূর্বাচল নতুন শহরকে অতিদ্রুত একটি…

    “সাত অঞ্চলের নদী বন্দরে সতর্কতা বার্তা”

    সংবাদ বিভাগ: রাজশাহী: সাত অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই সে সব এলাকার নদীবন্দরে দেওয়া হয়েছে সতর্কতা বার্তা । শনিবার (০৩ মে) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *