“যোগ্য নেতৃত্বের অভাব: রাজনীতির বিপর্যয় ও উত্তরণের পথ”

রাজনীতি করতে গেলে সবার আগে জানতে হবে রাজনীতি কী, দল কী, দেশ কী, জনগণ কী এবং দেশ পরিচালনার আদর্শ ও নীতিমালা কী হওয়া উচিত। নেতা ও কর্মী কাকে বলে, তাঁদের দায়িত্ব ও করণীয় কী! এসব মৌলিক বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানা এবং বুঝা আবশ্যক। বিশেষ করে, একজন নেতার মধ্যে কী কী গুণাবলী থাকা প্রয়োজন, তা জানা এবং সেসব গুণ বিকাশে কাজ করা জরুরি। এসব বিষয় জানতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের উপর ন্যূনতম জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছুদিন মিছিল-মিটিং করলেই, পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে বা গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় পদ-পদবী পেয়ে কেউ কেউ নিজেকে নেতা দাবি করে বসেন। অথচ নেতৃত্ব মানে শুধু পদ পাওয়া নয়; এটি একটি গভীর দায়িত্ব, একটি কঠিন আমানত। অথচ সেসব গুণাবলী ছাড়াই যদি কেউ নেতা হয়ে যান, তবে সেই রাজনীতি আর সেই নেতৃত্ব কেবল ধ্বংস ডেকে আনে।
আমাদের দেশে আজ এই সমস্যাটিই প্রকট। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অযোগ্য নেতৃত্বের ছড়াছড়ি। এই নেতৃত্বের অভাবে দলগুলো হারিয়েছে তাদের মূল আদর্শ। ফলস্বরূপ, দল, রাষ্ট্র, এবং জনগণ তিন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে, এসব অযোগ্য নেতাদের কারণে জনগণ আজ রাজনীতিকে ঘৃণা করে, দলগুলোর প্রতি তাদের আস্থা তলানিতে পৌঁছেছে।
রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাবে গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমে ভুল সিদ্ধান্ত ও অপব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা কিংবা কেন্দ্রীয় রাজনীতি – সবখানেই অযোগ্য নেতৃত্বের শাসন জেঁকে বসেছে। এই নেতারা ক্ষমতায় এসে নিজেদের স্বার্থে অনিয়ম, দুর্নীতি, এবং স্বজনপ্রীতির চর্চা করেছে। জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে, দলীয় কর্মীদের আস্থায় আঘাত হেনে, রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিয়েছে।
এই অযোগ্য নেতাদের কারণে জনগণ শুধু বঞ্চিত হয়নি; তারা ক্রমে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থান কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ও অযোগ্য ব্যক্তি নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার খেলায় মেতেছে। তাদের এই খেলার মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে—অধিকার হারিয়ে, আর্থিক ক্ষতি বয়ে, এবং চরম সামাজিক অস্থিরতার শিকার হয়ে।
কিন্তু এই হতাশা থেকে উত্তরণের পথ এখনো বন্ধ হয়নি। আজ আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর বড় ধরনের সংস্কার। প্রয়োজন একটি পজিটিভ পরিবর্তন, যা দলগুলোর মধ্যে নতুন করে শুদ্ধতার চর্চা শুরু করবে। জনগণের সঙ্গে দলগুলোর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। নেতা এবং কর্মীদের মাঝে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটি ঘোচাতে হবে আন্তরিকতা, সততা, এবং আদর্শের মাধ্যমে।
সুস্থ ধারার রাজনীতি তখনই সম্ভব, যখন দলগুলোর নেতৃত্ব সঠিক মানুষের হাতে থাকবে। নেতৃত্বের গুণাবলীহীন, স্বার্থপর, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের জায়গা দখল করতে হবে সৎ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক নেতাদের। যখন জনগণের আস্থা ফিরে আসবে, তখনই রাজনীতি হবে উন্নয়ন আর শান্তির হাতিয়ার। তখনই দূর্নীতি, হানাহানি, মারামারি বন্ধ হবে। জনমনে শান্তি ফিরে আসবে, এবং একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
এই পরিবর্তন কোনো একক ব্যক্তি বা দলের দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। রাজনীতি যদি জনসেবার জায়গা হয়, তবে আসুন আমরা সবাই মিলে এটিকে সেই জায়গাতেই ফিরিয়ে আনি। আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে নিজেদের ভুলগুলো শোধরাই এবং একটি নতুন দিনের সূচনা করি।

বুলবুল আহম্মেদ হাজরা
বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এর সন্তান

  • Related Posts

    এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

    সংবাদ বিভাগ: বৈশ্বিক রাজনীতিতে যখন বিশ্বযুদ্ধে’র দামামা, বিশ্ব নিয়ন্ত্রক দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগীর দাম্ভিক উত্তেজনা, বাংলাদেশে ঘটে গেল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, পুণরায সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সহস্র তরুণে’র বুকের রক্তে রাজপথে’ই…

    বিজয়ে বিনির্মান

    ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বিজয় ২০২৪ -এর ৫ আগস্ট নতুন ভাবে ধুয়ে মুছে ঝকঝকে এক নতুন বাংলাদেশ দেবার প্রত্যয় নিয়ে এই দেশের মানুষের সামনে এসেছে। আর আমরা সেটা সাদরে…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *