সংবাদ বিভাগ: বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে ভালোভাবেই চলছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা জানান।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত মঙ্গলবার রাতে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে পৌঁছান খালেদা জিয়া। ৮ জানুয়ারি লন্ডনের স্থানীয় সময় সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে খালেদা জিয়াকে পশ্চিম লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি অধ্যাপক ডা. প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, লন্ডনে যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল, তিনি (খালেদা জিয়া) সেখানেই ভর্তি হয়েছেন এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। আল্লাহর মেহেরবানিতে তার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে। আমরা সবাই দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, যেন আল্লাহ তাকে দ্রুত সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বাফুফে প্রেসিডেন্ট তাবিথ আউয়াল। বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, হিথ্রো এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়া সরাসরি হসপিটালে চলে যান। এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। পরে তারেক রহমানের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন ইমিগ্রেশন ক্রস করার পর। এ মিলনটা অত্যন্ত ইমোশনাল এবং খুশির মিলন হয়েছিল। ঠান্ডার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাকে গাড়িতে তুলে হসপিটালে নিয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, বিস্তারিত এখন তার মেডিকেল টিম এবং অফিশিয়ালি ডাক্তাররা বলতে পারবেন। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তার চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে। আশা করি শিগগিরই উনি সুস্থতার দিকে চলে যাবেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখনো ছুটিতে আছেন। তারা এসে খালেদা জিয়াকে দেখবেন। সে অনুযায়ী তার চিকিৎসাপদ্ধতি কি হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যরাও আছেন। তারাও ওনাদের (দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসকদের) সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবেন।
জাহিদ হোসেন জানান, দ্য লন্ডন ক্লিনিক এ কার্ডিওলজিস্ট, আইসিইউ স্পেশালিস্ট, ইন্টারন্যাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট এবং ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তারা আরও কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্ব শেষ হবে।
এ সময় জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী জুবায়দা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শর্মিলা রহমান ও খালেদা জিয়ার নাতনিরা সার্বক্ষণিক পাশে থেকে তার মানসিক একাকিত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মামলায় সাজা নিয়ে তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রীর লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে কয়েক দফা আবেদন করা হয় কিন্তু সেই সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান।