একজন মেহের আফরোজ শাওন যে কীনা যেখানে সেখানে হুমায়ূন আহমেদের নামে ভুলভাল ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াবে। ২০০৪ সালে দুই লাখ টাকায় কত ছোট্ট বিয়ের গহনা কিনেছিলেন তার গাল-গল্প করবে। চৌদ্দ-পনের বয়সে হুমায়ূন আহমেদ যে চিরকুট দিতেন তা নিয়ে কথার ঝুলি সাজাবে। অথচ আমাদের সমাজে একজন বিবাহিত পুরুষ মেয়ের বয়সী একজন কিশোরীকে চিঠি দিলে লোকে বলবে,
-শা’লা পারভার্ট!
আজ রবিবার, নক্ষত্রের রাত নাটকে শিলা আহমেদ শাওনের সহশিল্পী ছিলেন। দুজন সমবয়সী মেয়ের মাঝে একজন লেখকের কন্যা অন্যজন প্রেয়সী এই বিষয়টা যে কতটা হীনকর শাওন কি বুঝেও বুঝেন না?
শিলা আহমেদের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জয়ী অভিনেত্রী নক্ষত্রের তারার মত জ্বলে উঠার আগেই বিলীন হয়ে গেছে।নোভা, বিপাশার মত হুমায়ূন আহমেদের সুযোগ্য কন্যারা মিডিয়াজগত এড়িয়ে যেতে পছন্দ করেন এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা তৎপর নন। বাবার প্রতি একরাশ ক্ষোভ তিনকন্যাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে এসব কি তথাকথিত শিক্ষিত(!) শাওনের চোখে পরে না?
হোটেল গ্রেভার ইনে স্মৃতিচারণমূলক ভ্রমনকাহিনীতে লেখক সাহেব বর্ণনা করে গেছেন, কন্যা শিলার জন্মের সময় তিনি ওটি রুমে উপস্থিত ছিলেন। সন্তান জন্মদানের অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে স্ত্রীকে সহ্য করতে দেখে নিজেই আতঙ্কে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন।পরপর পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন গুলতেকিন আহমেদ।
দেশে ফেরার পর বেসরকারি হসপিটালে সেবা নেবার মত আর্থিক সঙ্গতিও ছিল না একসময়ের ধনীর দুলালীর।বাড়িতে টিভি ছিল না, মেয়েরা পাশের বাসায় টিভি দেখতে যেত তা দেখে টিভি কেনার জন্য প্রথম টিভি নাটক লিখতে বসেন লেখক।
একজন মধ্যবিত্ত বাবা মেয়েদের শখ পূরণ করতে লড়াই করে যাচ্ছে তখন পর্যন্ত গল্পটা চমৎকার ছিল। একজন প্রেমময়ী স্ত্রী তার ক্যারিয়ার, পড়াশোনা সব বিসর্জন দিয়েছেন স্বামীর সহচারিণী হতে আর লেখক বর কলমের কালিকে সম্বল করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।হয়ত মাঝে মাঝে গুলতেকিন আহমেদের হৃদয়ে বিতৃষ্ণা এসে ভর করত, বাকিসব মধ্যবিত্ত মায়েদের মনে যেমন হয়।
সংসারের যাঁতাকল এবং সন্তানদের দায়িত্ব পালন করতে করতে প্রেয়সী রুপটা মলিন হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত গুলতেকিন খান চমৎকার সুশ্রী৷
কিন্তু নারীর রুপের পাশাপাশি পুরুষ মানুষ আহ্লাদী স্বর, মায়াবী দৃষ্টি যেমন খুঁজে চার সন্তানের মায়ের কিন্তু সেদিকে নজর দেবার সময় এবং সুযোগ রোজ হয়ে উঠে না।অধিকাংশজন স্ত্রীর এই প্রিয়া থেকে জননী হয়ে উঠার ভ্রমন হাওয়াবদলের মত উপভোগ করে। আবার কেউ বা অন্য নারীর মোহে আটকে যায়।
গুলতেকিন খানের মত ব্যক্তিত্বশীল ভদ্রমহিলা স্বামীর এই পরকীয়া মেনে নিতে পারেন নাই বলেই সংসার ভেঙেছিলেন।একমাত্র তিনিই পারেন, হুমায়ূন আহমেদের ভালো-মন্দের মিশেল রূপ আপামর জনতার কাছে উপস্থাপন করতে।
কেননা, তিনি ব্যক্তি হুমায়ূনকে সবচেয়ে ভালো করে চিনেন এবং জানেন। বিশিষ্টি কথাসাহিত্যিক,নাট্যকার, কাহিনীকার, পরিচালক এই বিশেষণগুলো লেখকের নামের আগে বহু আগে থেকেই তিনি লেখকের জীবনযাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন। একজন মানুষের একটু একটু করে বদলে যাবার গল্প,সন্তানদের কাছ থেকে দূরে যাবার করুণ ইতিহাস বলে তিনি জনে জনে বলে কারো সিমপ্যাথি অর্জন করতে যান নাই। বরং সুযোগ্য সন্তান তৈরি করে দিয়ে তিনি স্যালুট পাবার মত দৃষ্টান্ত স্খাপন করে গেছেন।
অন্যদিকে মেহের আফরোজ শাওন মিডিয়া জগতের মানুষ। যদিও সাংবাদিক বা টিভি উপস্থাপকেরা তার বর্তমান জীবনযাপন বা কাজের চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাথে তার দাম্পত্য জীবনের গল্প শুনতে বেশি আগ্রহ দেখান।তিনিও ইনিয়ে বিনিয়ে বলে যান, হুমায়ূন আহমেদ চারটা ইদ একা করেছে। পরিবার-পরিজন কেউ কাছে আসে নাই।
পিছনের গল্পটা এইযে স্ত্রীকে রেখে শাওনের সাথে সম্পর্কের জোরে পুরো পরিবার তাকে ত্যাগ করেছিল তা তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। নুহাশকে নিয়ে গর্ব করে আলোচনা করার আগে ভাবা উচিত, এই নুহাশকে তিনি বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন।একেই বলে,সুসময়ে বন্ধুর অভাব হয় না।
যাই হোক,মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করার কারণে হুমায়ূন আহমেদের মত কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক বেঁচে থাকা অবস্থাতেই ভক্তকুল এবং দেশবাসীর যথেষ্ট বিরক্তির কারণ হয়েছিল।
তিনি অমর হয়ে আছে তার অনবদ্য লেখা এবং বাংলা নাটক-চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে। পাঠকেরা প্রিয় লেখকের এই দুই পরিচয়কে কেন্দ্র করে যুগ যুগ হুমায়ূন আহমেদকে স্মৃতির মণিকোঠায় জীবিত রাখবে।তারজন্য শাওনের প্রদীপওয়ালা,চিরকুট লেখক হুমায়ূনের গল্প শোনা একদমই প্রয়োজন নেই।